বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৫৭.৮৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৫৭.৮৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ৬৫.৫৭ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল।

বর্তমানে পাইকারিতে পিডিবির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। পিডিবি প্রতি ইউনিট তিন টাকা ৩৯ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করে।

বিইআরসির কারিগরি কমিটি দুই টাকা ৯৯ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। তবে সরকার যদি ভর্তুকি অব্যাহত রাখে তাহলে দাম বাড়ানোর দরকার নেই বলে সুপারিশে উল্লেখ করেছে কমিটি।
নিয়ম অনুযায়ী আগামী ৯০ দিনের মধ্যে বিইআরসি এই সুপারিশের ভিত্তিতে নতুন দাম ঘোষণা করবে। এরপর পিডিবি বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে নতুন দামে বিক্রি করবে। বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এরপর গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়াতে বিইআরসির কাছে প্রস্তাব দেবে। বিইআরসি অনুমোদন করলে বিদ্যুতের নতুন দাম কার্যকর হবে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে গণশুনানিতে এ সুপারিশ উপস্থাপন করে কারিগরি কমিটি। বিইআরসি কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান, মোহাম্মদ আবু ফারুক ও মো. কামরুজ্জামান। পিডিবির মহাপরিচালক, পরিচালকসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

ভোক্তাদের পক্ষে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ (এমসিসিআই) বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

গণশুনানিতে ভোক্তা প্রতিনিধিরা বলেছেন, অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় করা হলে বিদ্যুৎ খাতে তিন হাজার ৩৭২ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে। মূল্যবৃদ্ধি কিংবা ভর্তুকি প্রদানের প্রয়োজনই হবে না। বিদ্যুতের দাম বাড়ালে এই মুহূর্তে জীবনযাত্রায় এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, প্রস্তাবে দেখা যাচ্ছে, পিডিবির ঘাটতি প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। অযৌক্তিক ব্যয় বৃদ্ধির কারণে তাদের এই ঘাটতি সমন্বয় করতে আসতে হয়েছে গণশুনানিতে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করলে জনজীবনে অসহনীয় প্রভাব পড়বে। সেটা বিবেচনা করে মূল্যবৃদ্ধিও নয়, ভর্তুকিও নয়, অযৌক্তিক লুণ্ঠনমূলক ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে।

শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুতের এ রকম মূল্য বৃদ্ধি করলে অর্থনীতির ধ্বংস অনিবার্য। শিল্প-কারখানায় বিদ্যুৎ ব্যবহারে ভীতি তৈরি হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানিকে ঘিরে সরকারের রাজস্ব আহরণের যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সেটি ধ্বংস টেনে আনবে। ব্যক্তি ও বেসরকারি খাতের স্বার্থ রক্ষার জন্য আইপিপির বেশি মূল্যের বিদ্যুৎ ক্রয় করা হচ্ছে। এসব জায়গায় যদি খরচ সাশ্রয়ের চিন্তা করা হতো তাহলে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হতো না।

শামসুল আলম আরো বলেন, গ্রামাঞ্চলে এখনো লোড শেডিং আছে। কিন্তু সেই তথ্য পিডিবি অস্বীকার করে। এটা পরিকল্পিত। গণশুনানিতে ক্যাবের পক্ষ থেকে ১১টি প্রস্তাব ও সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি।

বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন বলেন, এভাবে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে চুরি করে বিদ্যুৎ লাইন নিয়ে ব্যবহারের প্রবণতা বাড়বে। ব্যবসায়ীরা বিকল্প হিসেবে জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে পারেন।

বিইআরসিকে উদ্দেশ করে ইজাজ হোসেন বলেন, ভোক্তাকে সুবিধা দিতে পিডিবির উচিত সাশ্রয়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ব্যবহার করা। একই সঙ্গে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম বাড়াতে পিডিবির দেওয়া প্রস্তাব কতটুকু যৌক্তিক, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির বিদ্যুতের দাম একবারে অনেক না বাড়িয়ে অল্প অল্প করে বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি জনগণকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করছে। একইভাবে রপ্তানি শিল্পে উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষি, শিল্প, সেবা ও উৎপাদন খাতে।

বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমরা যুক্তিতর্ক লিপিবদ্ধ করেছি। সব বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে। আপনাদের আরো কোনো মতামত থাকলে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত দাখিল করতে পারবেন। আমরা সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত জানাব। ’

বিইআরসি সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিটপ্রতি ৫.১৭ টাকা নির্ধারণ করে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title