গফরগাঁওয়ে ১৫ দিনব্যাপী সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে ৩০ নারী পেলেন সনদ25
গফরগাঁওয়ে ১৫ দিনব্যাপী সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে ৩০ নারী পেলেন সনদ25

- আপডেট সময় : ০৯:৩৭:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫ ৯ বার পড়া হয়েছে
জেলা প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় দারিদ্র্যপীড়িত ও পিছিয়ে পড়া নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৫ দিনব্যাপী এক সেলাই প্রশিক্ষণ কোর্সের সফল সমাপ্তি হয়েছে। এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী ৩০ জন নারী প্রশিক্ষণার্থী আজ মঙ্গলবার (৮ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষণ সনদ লাভ করেছেন।
গফরগাঁও পৌরসভার আয়োজনে ও উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে, উপজেলা পরিষদ সভা কক্ষে আয়োজিত এই সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও গফরগাঁও পৌর প্রশাসক এন. এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বও করেন।
💬 মূল বক্তব্য ও লক্ষ্য
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও এন. এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “একজন নারীর স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা মানে শুধু তার ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং একটি পরিবারের ও সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতি। এই প্রশিক্ষণ নারীদের শুধু একটি পেশাদার দক্ষতা শেখায় না, বরং তাদের আত্মবিশ্বাসও গড়ে তোলে। আমাদের লক্ষ্য গফরগাঁওয়ের নারীদের কর্মক্ষম ও আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলা।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান সরকারের বিশেষ উদ্যোগে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে দক্ষতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। গফরগাঁও উপজেলাও এ কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে।”
👥 উপস্থিত অতিথিরা
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গফরগাঁও পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান, আইইউজিআইপি প্রকল্পের সিডিএ মোঃ মাসুদুর রহমান, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খালেদা আক্তার এবং উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন। এছাড়াও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরাও উপস্থিত ছিলেন।
🧵 প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিবরণ
১৫ দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে নারীরা আধুনিক সেলাই মেশিন ব্যবহারের কৌশল, প্যাটার্ন তৈরি, কাটিং, ফিনিশিং ও ছোট ব্যবসা পরিচালনার মৌলিক ধারণা লাভ করেন। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী অনেকেই ভবিষ্যতে নিজস্ব টেইলারিং ব্যবসা শুরু করার আশা প্রকাশ করেন।
প্রশিক্ষণার্থী রুবিনা আক্তার বলেন, “আমি আগে কিছুই পারতাম না। এখন নিজেই ব্লাউজ, থ্রি-পিস, বাচ্চাদের পোশাক তৈরি করতে পারি। সনদ পাওয়ার পরে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে। আমার স্বপ্ন এখন নিজের একটি ছোট টেইলার্স খুলে উপার্জনের পথ তৈরি করা।”
🌱 নারী ক্ষমতায়নে গুরুত্ব
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খালেদা আক্তার বলেন, “নারী উন্নয়নের জন্য এই ধরনের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না, তাদের উপযুক্ত সহযোগিতা, মূলধন ও বাজার সংযোগও জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “এই সনদ নারীদের ভবিষ্যতে সরকারিভাবে আরও প্রশিক্ষণ ও লোন সুবিধা পেতে সহায়তা করবে। আমরা তাদের পাশে আছি।”
🎯 ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
গফরগাঁও পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ভবিষ্যতে আরও নারীভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে, যার মধ্যে থাকবে বিউটি পার্লার প্রশিক্ষণ, হস্তশিল্প ও ডিজিটাল মার্কেটিং। এ লক্ষ্য পূরণে সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় প্রশাসন একযোগে কাজ করবে।
গফরগাঁও পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান জানান, “আইইউজিআইপি প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী করতে আমাদের বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা রয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে নারীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
✅ উপসংহার
এই ধরণের প্রশিক্ষণ শুধু একটি আর্থিক বিকল্পই নয়, এটি নারীদের সামাজিক অবস্থান পরিবর্তনের একটি কার্যকর হাতিয়ার। গফরগাঁওয়ে এই উদ্যোগ নারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। স্বল্প আয়ের পরিবারের নারীরা এখন নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে শুরু করেছেন, যা সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এভাবে প্রশিক্ষণভিত্তিক উন্নয়ন কর্মসূচির সম্প্রসারণ ও টেকসই বাস্তবায়নের মাধ্যমে গফরগাঁও হতে পারে একটি মডেল উপজেলা—যেখানে প্রতিটি নারী হবে আত্মনির্ভরশীল, মর্যাদাসম্পন্ন ও সমাজের একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী।