নালিতাবাড়ীতে বীর জায়াদের সংবর্ধনা

শেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ ১৯৭১ সালে স্বামী সন্তান হারাইয়া বিধবা অইছি, এ পর্যন্ত কেউ আমগরে এমুন করে খোঁজখবর নেয় নাই। এহন আমগোরে কে দেখবো! পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল যেভাবে আমগরে আদর যত্ন করছে, যা না খাইছি তা খাওয়াছে। এহন আমগরে কে দেখবো কে খোঁজখবর নিবো!’ এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ীর সোহাগপুরের বিধবাপল্লীর বিধবা মহিরন বেওয়া।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে মধুটিলা ইকোপার্কের মহুয়া রেষ্ট হাউজে শেরপুর জেলা পুলিশের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোহাগপুর বিধবাপল্লীর জায়াদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিজেদের অনুভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে বিধবা মহিরন বেওয়া ও হাফিজা বেওয়া এ কথাগুলো বলেন।
তারা আরো বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীর কাছে আমগর স্বামী সন্তান হারাইছি। কাজী আশরাফুল আজীম আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিছেন। বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে উপহার নিয়া আমগর বাড়ি আইছে। এহনতো তিনি বদলী অইয়া চলে যাবো। এহন কে খোঁজখবর নিবো। এসয় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তাদের কান্না দেখে উপস্থিত সাংবাদিক, সুধীমহল পুলিশ সদস্যরা তাদের কান্না ধরে রাখতে পারেন নি।
এদিন সোহাগপুরের ২৫ জন বিধবার হাতে শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম সম্মাননা স্মারক, শাড়ী-চাদর, ২০ কেজি করে চাল, ৫ কেজি করে ডাল ও সাবানসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলে দেন।
এতে উপস্থিত ছিলেন শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, ফেরদৌস আলম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর র্সাকেল) আমিনুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম (নালিতাবাড়ী সার্কেল), ডিআইও-১ আবুল বাশার, সাংবাদিক এমএ হাকাম হীরা, সামেদুল ইসলাম তালুকদার, সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিবির ওসি রুহুল আমীন তালুকদার, নালিতাবাড়ীর ওসি বছির আহমেদ বাদল, নকলার ওসি মুশফিকুর রহমান, ঝিনাইগাতীর ওসি ফায়েজুর রহমান, শ্রীবরদীর ওসি মোখলেছুর রহমানসহ সাংবাদিক ও পুলিশের বিভিন্নস্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
বিদায়ী পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম তার বক্তব্যে বলেন, সোহাগপুর হলো একটি আবেগের নাম, একটি ভালোবাসার নাম। সোহাগপুর গ্রামের দিকে তাকালেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায়। এ গ্রামের বিধবাদের স্বামী, সন্তান আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীনতা পেয়েছি। তিনি বিধবাদের উদ্দেশ্যে বলেন আমি চাকুরী জীবনে বদলী হলেও আপনাদের পাশে আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এ এলাকার সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অগ্নিকন্যা বেগম মতিয়া চৌধুরী। তারা আপনাদের কথা জানেন। তারাতো খোঁজখবর নিবেনই সর্বোপরি মহান আল্লাহ আপনাদের দেখে রাখবেন। আমি এই দোয়াই করছি।
উল্লেখ্য, শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম গত ২০১৮ সালের জুন মাসে শেরপুর জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পান। সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশ তাকে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে বদলী করে এক প্রজ্ঞাপন জারী করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title