রূপচর্চায় গাজর

গাজর খেতে অপছন্দ করেন এমন মানুষ কমই আছেন। এটি এমন এক সবজি, যা সারা বছর বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু শীতের শেষে বসন্তের শুরুতে একটু বেশিই সুলভ মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। স্বাদ ও পুষ্টিগুণে সেরা গাজর রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও কম যায় না। চোখ আর দাঁতের মতো ত্বক ও চুলের জন্য বেশ উপকারী এটি। গাজর হতে পারে আপনার সুন্দর আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক ও চুলের গোপন রহস্য! ত্বক আর চুলের সব সমস্যা এই এক গাজর ব্যবহারেই সমাধান করতে পারবেন।

শুষ্ক ত্বকের জন্য
জিন, হরমোন ও পরিবেশগত—এই তিন কারণে মূলত ত্বক শুষ্ক হয়ে থাকে। শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের জন্য গাজর একটি আদর্শ রূপচর্চার উপাদান। পটাশিয়ামসমৃদ্ধ গাজর ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে একে ভেতর থেকে আর্দ্রতা প্রদান করে। এ জন্য ব্যবহার করতে পারেন একটি সহজ ফেস মাস্ক। একটি গাজরের অর্ধেকটা অংশ ভালো করে পানি দিয়ে পেস্ট করে এতে এক চামচ দুধ ও এক চামচ মধু মেশান। মাস্কটি মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন দিন লাগালে ত্বকের শুষ্কতা কমে আসবে অনেকখানি।

তৈলাক্ত ত্বকে
শুষ্ক ত্বকের মতো তৈলাক্ত ত্বকের বিশেষ যত্নের ক্ষেত্রে গাজর খুব ভালো কাজ করতে পারে। কারণ, গাজরের ভিটামিন এ ত্বকের অতিরিক্ত তেল বের করে দিয়ে একে সতেজ ও টক্সিনমুক্ত রাখে। তৈলাক্ততা দূর করতে চটজলদি বানিয়ে ফেলতে পারেন একটি ফেস মাস্ক। এটি বানাতে প্রয়োজন হবে এক কাপ গাজরের রস, এক টেবিল চামচ টকদই, বেসন ও লেবুর রস। সব কটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে ও ঘাড়ে ভালোভাবে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে আলতো করে ধুয়ে ফেলুন।

অ্যান্টি–এজিং মাস্ক
গাজর অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে ত্বকের বয়সের গতির লাগাম টানে। এই ভিটামিন সি অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের মতো কাজ করে ফ্রি র‍্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই ফ্রি র‍্যাডিকেলই ত্বকের সুক্ষ্মরেখা ও বলিরেখার জন্য দায়ী। ত্বকে যদি এসবের উঁকিঝুঁকি দেখেন, তাহলে মুখে লাগাতে পারেন গাজরের অ্যান্টি–এজিং মাস্ক। লাগবে শুধু একটা ছোট সাইজের গাজরের পেস্ট আর এক টেবিল চামচ জলপাই বা নারিকেল বা আমন্ডের তেল। একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। তার আগে ত্বকটি ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে ভুলবেন না। মাস্কটি ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ইউভি রশ্মির বিরুদ্ধে
বিটা ক্যারোটিন সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মির ক্ষতির বিরুদ্ধে বাইরে ও ভেতর থেকে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষমতা রাখে। এ ছাড়া আলট্রাভায়োলেট রশ্মির ফলে ত্বকের কোষের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করতে পারে এটি। এ জন্য প্রতিদিন সবার উচিত ছোট বা বড় যেকোনো আকৃতির গাজর খাওয়া বা এর জুস পান করা। পাশাপাশি ব্যবহার করতে পারেন গাজরের বিশেষ ফেস মিস্ট। এ জন্য লাগবে এক কাপ গাজরের রস, আধা কাপ গ্রিন টি, এক চামচ অ্যালোভেরা জেল। সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে রেখে দিন। বাইরে বের হওয়ার আগে মুখে স্প্রে করুন।

চুল পড়া কমাতে এবং নতুন চুল গজাতে
ত্বকের মতো চুলের সমস্যা সমাধানে গাজর বেশ কার্যকর। এতে থাকা ভিটামিন আর খনিজ উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে। আর গাজরের ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই মাথার তালুর রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে। এ জন্য চুলে লাগাতে পারেন গাজরের তেল। বানানো খুবই সহজ। দুটি ছোট সাইজের গাজর গ্রেটার দিয়ে কুচি করে কেটে দেড় কাপ জলপাই তেলের সঙ্গে মিশিয়ে এক সপ্তাহ ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গায় রেখে দিলেই হবে। এই কয়দিনে তেলের রঙ হবে গাজরের মতোই উজ্জ্বল কমলা। ছেঁকে নিয়ে পরিষ্কার পাত্রে আলাদা করে রেখে অনেক দিন ব্যবহার করতে পারবেন এই তেল। এ ছাড়া মাথার তালুতে গোসলের আধা ঘণ্টা আগে গাজরের রস লাগাতে পারেন। এতে চুল হবে সুন্দর ও ঝলমলে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title