খাদ্য সহায়তা চেয়ে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে ৩ লাখ কল

অসহায়কে সরকার খাদ্য সহায়তা দেবে এমন ঘোষণার পর জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ তে খাদ্য কল দিয়েছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। গত ২৫ এপ্রিলের পর থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এসব কল আসে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। তবে এসব কলের মধ্যে অধিংকাংশই যাচাই বাছাইয়ে বাদ পড়ে। প্রকৃত খাদ্য সহায়তা প্রার্থীদের তথ্য মাঠ প্রশাসনে পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরজমিন সেই তথ্য যাচাই বাছাই করে বাড়ি বাড়ি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন।

সরকারি তথ্যসূত্র বলছে, যারা কল দিচ্ছেন তাদের মধ্য থেকে যাচাই বাছাই করে যোগ্য বিবেচিত হওয়ায় প্রায় ১৬ হাজার আবেদনকারীর তথ্য মাঠ প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরজমিন আবেদন যাচাই করে ২ হাজার ৫৭৭টি পরিবারের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ১৪ই এপ্রিল থেকে জনসাধারণের কার্যাবলী ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এ পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া এবং দুস্থ নাগরিকদের কাছে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের জন্য নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বরাদ্দকৃত ও পূর্বে মজুতকৃত অর্থ থেকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল, ডাল, তেল, লবণ ও আলু বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়। রবিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কোনো মধ্যবিত্ত পরিবার যদি খাদ্য সংকটে থাকেন তবে তিনি ৩৩৩ নম্বরে কল দিলে তার বাসায় খাবার পৌঁছে যাবে।

ওইদিন থেকেই ৩৩৩ নম্বরে খাদ্যসেবা আইভিআর কার্যকর করা হয় এবং অসংখ্য কল আসতে শুরু করে। তবে এসব কলের মধ্যে অধিংকাংশই ভুয়া হওয়ায় সেগুলো বাদ দেয়া হয়। প্রকৃত খাদ্য সহায়তা প্রার্থীদের তথ্য মাঠ প্রশাসনে পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরজমিন সেই তথ্য যাচাই বাছাই করে বাড়ি বাড়ি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। মাঠ প্রশাসন থেকে খাদ্য সহায়তার তথ্য সংগ্রহ করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের জরুরি সাড়াদান কেন্দ্র। আর পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র।

গেল ২৭ এপ্রিল নেত্রকোনা থেকে ৩৩৩ তে কল করে ত্রাণ দাবি করেন দুইজন ব্যক্তি। পরে ত্রাণ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন রাতের আঁধারে ত্রাণ নিয়ে দেখেন একজন ঠিকাদার, অপরজন ব্যবসায়ী। মজা করে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে সরকারি ত্রাণ চান চেয়েছেন বলে জানান তারা। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ওই দুই ব্যক্তিকে ২৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ও একজনকে অন্য জনের কান ধরে উঠাবসা করানো হয়। এরকম ঘটনা উঠে আসছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। অনেকেই কল দিয়ে পরীক্ষা করছেন, কল দিলে সত্যিই ত্রাণ আসে কি না।

জানা গেছে, ত্রাণ সহায়তা ছাড়াও সারাদিন বিভিন্ন কল আসতে থাকে। এদের মধ্যে অনেকেই নানা ধরনের কথা বলে সময় নষ্ট করেন। এতে করে যারা প্রকৃত সমস্যা কিংবা প্রয়োজনে কল করেন, তাদেরকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়। বিশেষ করে ত্রাণের ঘোষণা আসার পর কলের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

জরুরি সাড়াদান কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩-এর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর স্থানীয় প্রশাসন গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২ হাজার ৫৭৭টি পরিবারের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এ সহায়তা পৌঁছে দেন। ৩৩৩ হেল্পলাইনটি বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি’র সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে।

এটুআই প্রকল্প কর্মকর্তা দিদার কিবরিয়া বলেন, ২৫শে এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৩৩ নম্বরের খাদ্য সহায়তা আইভিআরে ফোনকল এসেছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬২টি। যারা কল দিয়েছেন তাদের অনেকেই শুধুমাত্র ত্রাণ সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছেন। কলকারীর মধ্য থেকে ত্রাণ গ্রহণের যোগ্য বিবেচনা করতে ৪টি প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলেই যাচাই বাছাই করা হয়। এসব কল থেকে প্রক্রিয়াকরণের মধ্য দিয়ে বাছাইয়ের পর প্রকৃত সহায়তাপ্রার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ হাজার। যাচাই বাছাইয়ের পর ১৬ হাজার ব্যক্তির তথ্য মাঠ প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।

নাগরিকদের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন তথ্যসেবা প্রদানে ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩। ২০১৮ সালের ১২ই এপ্রিল থেকে চলতি ১৭ই এপ্রিল পর্যন্ত তিন বছরে ৩৩৩ নম্বরে প্রায় ৩ কোটি ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১ হাজারের বেশি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, ৬ হাজারের অধিক বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, প্রায় ২০ লাখ সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য প্রদান এবং ৪ লাখ নাগরিক সেবার পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মোট ফোনকলের মধ্যে সামপ্রতিক সময়ে ৫০ লাখের বেশি কল এসেছে শুধু করোনা বিষয়ক। স্বেচ্ছাসেবী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা দেয়া হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ নাগরিককে। ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে ত্রাণ সাহায্য চেয়ে কল এসেছে ১৮ লাখের বেশি। যথাযথ পদক্ষেপের জন্য এসব তথ্য মাঠ প্রশাসনের কাছে পৌঁছানো হয়েছে।

অবশ্য এই সেবাটি গত বছরের ৩১শে অক্টোবর বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এ বছর ২৫শে এপ্রিল পুনরায় চালু করা হয়। এটুআই প্রকল্পের কমিউনিকেশনস অ্যান্ড মিডিয়া আউটরিচ কনসালট্যান্ট আদনান ফয়সল বলেন, মধ্যবিত্ত মানুষ তাদের কষ্টের কথা কারো কাছে বলতে পারে না, তারা ফোনের মাধ্যমে তাদের অসহায়ত্বের কথা আমাদের জানাচ্ছে। আমরা তাদের তথ্য মাঠ প্রশাসনের নিকট পাঠাচ্ছি এবং তারা যাচাই বাছাই করে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। এ ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতিতেও প্ল্যাটফরমটিতে নাগরিকদের ফোন কলের সংখ্যা বেড়ে যায়। বর্তমানে হেল্পলাইন এজেন্ট, স্বেচ্ছাসেবক ডাক্তার এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title