গাইবান্ধায় সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে নারী গ্রেফতার25
গাইবান্ধায় সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে নারী গ্রেফতার25

- আপডেট সময় : ০৫:৪৩:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫ ৬ বার পড়া হয়েছে
জেলা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলার ভাটপাড়া, গোপালপুর এলাকায় গতকাল রাতে সেনাবাহিনীর পরিচালিত এক বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযানে মাদকসহ এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ১ কেজি গাঁজা ও নগদ ২,৫৩০ টাকা।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২৩ জুন রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল, মেজর ইনজামামুলের নেতৃত্বে, এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে টার্গেট ছিল ভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোছা: শাহনুরী বেগম (৪৩), স্বামী খোকা মিয়া।
সেনা সদস্যরা নির্ধারিত স্থানে পৌঁছানোর পর বাড়িটিতে তল্লাশি চালায় এবং বাড়ির ভেতর থেকে মাদকদ্রব্য ও নগদ অর্থ উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত গাঁজার পরিমাণ ১ কেজি এবং পাশাপাশি পাওয়া যায় নগদ ২,৫৩০ টাকা, যা মাদক ব্যবসার লেনদেন সংক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
আটককৃত নারী, মোছা: শাহনুরী বেগম, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গোপনে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও অনানুষ্ঠানিকভাবে নানা অভিযোগ উঠেছিল, তবে এবার সেনাবাহিনীর সরাসরি হস্তক্ষেপে ঘটনা প্রকাশ্যে এলো।
সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং এটি ছিল পরিকল্পিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। সেনাবাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে অভিযান পরিচালনা করেন, যাতে সাধারণ জনগণ ও পরিবারের কেউ আহত না হয়।
অভিযানের পরপরই আটককৃত শাহনুরী বেগমকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হবে এবং তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া ছিল ইতিবাচক। ভাটপাড়ার বাসিন্দা এক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, “অনেকদিন ধরে এখানে মাদক ব্যবসা চলছে। আমরা ভয়ে কিছু বলতে পারতাম না। সেনাবাহিনীর এই অভিযান আমাদের সাহস যুগিয়েছে।”
স্থানীয় শিক্ষক ও যুব সমাজের নেতারা বলেন, সেনাবাহিনীর এমন অভিযান শুধু মাদক ব্যবসা রোধ নয়, বরং যুব সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও এলাকাবাসী মাদক নির্মূলে নিয়মিত অভিযানের দাবি জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, “এ ধরণের অভিযান চলমান থাকলে অপরাধীরা এলাকা ছেড়ে পালাবে এবং গাইবান্ধা আবার শান্তিপূর্ণ জেলা হিসেবে ফিরে আসবে।”
সাম্প্রতিক সময়ে গাইবান্ধা জেলায় মাদকের বিস্তার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে ভাটপাড়া, গোপালপুর, বাদিয়াখালি ও গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় তরুণদের মধ্যে মাদকের ভয়াবহতা দেখা যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর সক্রিয়তা সাধারণ মানুষকে আশার আলো দেখাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, “যেখানে স্থানীয় প্রশাসন কখনো কখনো প্রভাবশালীদের চাপে চুপ থাকে, সেখানে সেনাবাহিনীর এমন নিরপেক্ষ ও ফলপ্রসূ অভিযান সমাজে ইতিবাচক বার্তা দেয়।”
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই ধরনের অভিযান আরও ব্যাপকভাবে পরিচালনার দাবি জানিয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আশাবাদ প্রকাশ করেছে। তারা বলছেন, শুধুমাত্র অভিযানই নয়, মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা কার্যক্রম, পুনর্বাসন প্রকল্প ও যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া প্রয়োজন।
পরিশেষে, গাইবান্ধায় গতরাতের সেনা অভিযানের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো—সঠিক তথ্য ও পেশাদার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমাজে অপরাধ দমন সম্ভব। এই ধরনের অভিযান কেবল একটি নারী গ্রেফতার বা কিছু গাঁজা উদ্ধার নয়, বরং এটি একটি বার্তা যে, মাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র এখন আরও সক্রিয় এবং সচেতন।