বগুড়ার গাববতীলে চাতাল শ্রমিক খুন!

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার গাবতলীতে চাতাল শ্রমিক ইব্রাহিম হোসেন (২১) কে গলা কেঁটে হত্যা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। হত্যাকান্ডের প্রায় ১০ ঘন্টা পরে গোয়েন্দা তথ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে আসামি ওই বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। নিহত ইব্রাহিমের ব্যবহৃত নীল রঙের এ্যাপাচি আরটিআর মটরসাইকেল ছিনতাইয়ের জন্য এ ঘটনা ঘটে। আর ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারই বন্ধু জাহিদ হাসান মামুন(১৯)। গ্রেফতারকৃত শেরপুর উপজেলার ফুলতলা গ্রামের খন্দকারটোলা এলাকার হানিফ সোনার ছেলে। তবে ঘাতক নিজেই প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

১৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুর ১২ টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

পুলিশ সুপার আরও জানান, ঘটনার দিন সোমবার ১৩ (সেপ্টেম্বর) জাহিদ নতুন এক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে ইব্রাহিমকে শেরপুর থেকে বগুড়া শহরে ডেকে নেয়। এরপর শহরে ইব্রাহিমকে সাথে নিয়ে মদ কিনে আরো কয়েক জন বন্ধু সহ খাওয়ার কথা বলে কৌশলে সোমবার দিবাগত রাতে গাবতলী থানাধীন মহিষাবান ইউনিয়নের পাঁচমাইল টু গোলাবাড়ী যাওয়ার পাকা রাস্তার দক্ষিণ পাশে নিশিন্দারা গ্রামের পরিত্যক্ত ইটভাটার মধ্যে নিয়ে আসে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইব্রাহিম, জাহিদ সব অন্যান্যরা সেখানে মদ পান করে।
এরপরে রাত আনুমানিক ১টার পরে ভিক্টিমের গলায় ধারালো ব্লেড দিয়ে গলা কাটে এবং মৃত ভেবে সেখানে ফেলে রেখে মটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন নিয়ে জাহিদেরা চলে যায়। পরে ঘাতকেরা চলে গেলে জীবন বাঁচানোর জন্য সেখান থেকে দৌড়ে পাকা রাস্তার পাশে সোহাগ নামের এক মুদি দোকানের সামনে গিয়ে পড়ে ইব্রাহিম। তখন দোকানদার সোহাগ ভিক্টিমের কাছ থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে তার বাবার ও গাবতলী থানা পুলিশকে জানায়।

খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যেয়ে ইব্রাহিমকে গলা কাটা গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল নিয়ে যায়।

পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টায় ইব্রাহিম মারা যায়। এরপরে গাবতলী থানা কয়েকটি টিমে ভাগ হয়ে অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে একটি বিশ্বস্ত সুত্র ও তথ্য প্রযুক্তি সাহায্য মূল অভিযুক্তকে জাহিদকে মঙ্গলবার সকালে নাটাইপাড়া ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে ছিনতাই হওয়া মটরসাইকেলটি নাটাইপাড়া আপন গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয়।

খুন হওয়া ইব্রাহিম হোসেন সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ব্রাহ্মনবয়রা ইউনিয়নের চায়নাবাদ গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। বগুড়ার শেরপুর মির্জাপুর গ্রামে মামা ছামসুল বারী ধানের চাতালে ঘটনার ৩ থেকে ৪ মাস আগে থেকে সে কাজ শুরু করে। কাজের সুবাদে এলাকায় ঘোরা ফেরার কারণে স্থানীয় যুবক ঘাতক জাহিদ হাসান মামুন সহ আরো কিছু বখাটে ছেলেদের সাথে তার বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইব্রাহিম তার মামার ব্যবহৃত নীল রংয়ের এ্যাপাচি আরটিআর মটরসাইকেল নিয়ে ব্যবসার কাজে বিভিন্ন এলাকায় চলা ফেরা করতো।
ব্রিফিংকালে পুলিশ সুপার আরও জানান, ঘটনার সাথে জড়িত বাকিদের নাম ঠিকানা জানতে আমরা কাজ করছি পাশাপাশি আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারকৃতকে আদালত সোপর্দ করে আমরা অধিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাইবো।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী, (অপরাধ) আব্দুর রশিদ, (ডিএসবি) মোতাহার হোসেন, (সদর সার্কেল ও মিডিয়া মুখপাত্র) ফয়সাল মাহমুদ, সহকারী পুলিশ সুপার (নন্দীগ্রাম সার্কেল ও অতিরিক্ত দায়িত্বে গাবতলী সার্কেল) রাজিউর রহমান ও গাবতলী মডেল থানার অফিস ইনচার্জ (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title